জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে জরিমানা

প্রকাশ: June 23, 2015
NID

জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে, এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে ২৩ জুন ২০১৫ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে। খবরটি আমরা ঢাকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

টাকা ছাড়া আর মিলবে না জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা। জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে গুনতে হবে ‘দুইশ টাকা জরিমানা’। নামেমাত্র দেয়া আইডি কার্ড নবায়ন থেকে আয় হবে হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন, হারানো, সংশোধন করতে আপাতত কোন ফি দিতে না হলেও আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে নির্দিষ্ট অংকের ফি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার ইসি সচিবালয়ের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এতে সর্বনিম্ন একশো টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা সেবাচার্জ নেয়ার কথা বলা আছে। সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন থেকে আয় করবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে সংশোধন, পরিবর্তন ও হারানো থেকে আয় হবে এক কোটি টাকা। হঠাত্ করে চার্জসেবা চাপিয়ে দেয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সেবার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বড় ধরনের বাণিজ্যের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দুই টাকার খরচের বর্তমানে নাগরিকদের দেয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিতে সর্বনিম্ন একশো টাকা থেকে এক হাজার টাকা গ্রহণ করা হবে নজীরবিহীন ঘটনা। বিদ্যমান ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে সবকিছু মিলিয়ে সরকারের খরচ হয়েছে ৫শ কোটি টাকার মতো। আর এই কার্ড নবায়ন থেকে আয় হবে হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন ইত্তেফাককে জানান, ৩০ আগস্টের পর জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন, হারানো, সংশোধন নির্দিষ্ট অংকের ফি দিতে হবে। আইনে ফি নেয়ার বিধান থাকায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা কমিশন নেবে না, সরকারের ফান্ডে জমা পড়বে।

বর্তমানে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে নাগরিকদের যে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয় তার পেছনে খরচ হয় মাত্র ২ টাকা। প্রতিদিন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, পরিবর্তন ও হারানোর বিষয়ে প্রায় এগারোশ আবেদন পড়ে। প্রতিটি আবেদন মঞ্জুর হলে দিনে আয় হবে ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। মাসে ৬৬ লাখ, বছরে ৮ কোটির মতো। বর্তমানে যে লেমিনেটিং করা ম্যানুয়াল কার্ড দেয়া হয়েছে তার মেয়াদ ১৫ বছর। তবে আগামীতে যে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে তার মেয়াদ হবে ১০ বছর। ফলে আগামী দশ বছর পর এই কার্ড নবায়ন করতে হবে সবাইকে। বর্তমানে দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ইসির তথ্য এই ভাণ্ডারে। তারপর ১৮ বছরের নিচের বয়সীদেরও কার্ড দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকে বড় অংকের আয় হবে সরকারের।

মূলত দাতা সংস্থার পরামর্শে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত সংশোধন’ সংক্রান্ত যে প্রবিধানমালা করা হয়-তাতেই জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সংক্রান্ত ফি নির্ধারণ করা আছে।

রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে এক বৈঠকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) থেকে ধারণা দেয়া হয় যে, বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ফি আদায়ের মাধ্যমে এনআইডি’র তথ্য যাচাই সেবা চালু হলে প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আয় হতে পারে।

সেবা নিতে যত টাকা লাগবে
প্রবিধানমালা অনুযায়ী পরিপত্র জারি করে জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়ন, সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহের চার্জ/ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ে আইডি কার্ড নবায়নের জন্য ১০০ টাকা এবং জরুরি ভিত্তিতে পেতে ১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। হারানো বা নষ্ট হওয়ার জন্য নতুন আইডি কার্ড পেতে প্রথম বারে ২০০ টাকা, জরুরি পেতে ৩০০ টাকা, দ্বিতীয় বারে ৩০০ টাকা, জরুরি পেতে ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রত্যেক বারের জন্য ৫০০ টাকা এবং জরুরি পেতে এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আইডি কার্ডে ভুল সংশোধনের জন্য প্রথম বার আবেদনে ২০০ টাকা, দ্বিতীয় বারে ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যে কোন বারে ৪০০ টাকা লাগবে। কার্ডে উল্লেখিত তথ্য উপাত্ত সংশোধনে প্রথম বার ১০০ টাকা, দ্বিতীয় বার ২০০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ে ৩০০ টাকা হারে চার্জ প্রদান করতে হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তাদের গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই সেবা পেতে চায়, তাদের জন্য এককালীন নিবন্ধন চার্জ পাঁচ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। সরকারি সংস্থা বা সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের জন্য এক্ষেত্রে প্রতিবারের জন্য ১ টাকা এবং বেসরকারি পর্যায়ে চার্জ ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই এ সেবা নিচ্ছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ সংস্থাসহ অন্তত ৭৫টি সংস্থা এ পর্যন্ত এনআইডি তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারে ইসির সঙ্গে চুক্তি করতে আবেদন করেছেন। ১৬টি তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পাবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

You must be logged in to post a comment Login

মন্তব্য করুন