ঢাকার বিশেষ অতিথিরা

স্বাধীন দেশের রাজধানীরূপে বিগত ৩৬ বছরে ঢাকার পরিধি অনেক বেড়েছে। বেড়েছে জনসংখ্যাও। বিশ্বখ্যাত অতিথিরা আসছেন এই নগরীতে। মাত্র কয়েক বছর আগে এই নগরীর আতিথ্য গ্রহণ করেছেন বিশ্বের সেরা ধনী মানুষ বিল গেটস।
নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় এসেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। দিল্লি থেকে এয়ারফোর্স-১-এ করে আসার সময় আকাশ থেকে তিনি বললেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ আপনাদের দেশটি ও রাজধানী শহর ঢাকা খুব চমত্কার। এই ঐতিহাসিক নগরীতে আসতে পেরে আমি গর্বিত।’ প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের আগে এসেছিলেন তার পত্নী যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন। তার সম্মানে ২৯ হেয়ার রোডে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়) রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকদের হিলারি ক্লিনটন বললেন, ঢাকার স্মৃতি আমি ভুলব না। আপনারা খুবই সৌভাগ্যবান। আপনাদের একজন নারী প্রধানমন্ত্রী এবং আরেকজন নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী। এ ব্যাপারে আমাদের দেশ এখনও রক্ষণশীল। নারীরা এ পর্যায়ে আসতে পারেনি। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। হিলারি ক্লিনটন তার আত্মস্মৃতি নিয়ে যে বই লিখেছেন সেখানেও আছে ঢাকার কথা। এ নগরীতে পিঁপড়ের সারির মতো এত মানুষের উপস্থিতির কথা তিনি তুলে ধরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও দু’বার ঢাকায় আসেন। একবার তিনি তার পত্নীকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় করে রমনা পার্কের সামনের রাস্তায় বেড়িয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে পাখির কলরব আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।
কিংবদন্তির গায়ক কুন্দন লাল সায়গল ঢাকায় এসে ডিমলার গাড়ি আর ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ঢাকার রাস্তায় তিনি গেয়েছেন, ‘আমার বীণায় গান আছে, আর তোমার বীণায় সুর আছে গো সুর আছে।’ কানন বালা ঢাকায় এসে ‘আমি বন ফুল গো’ গানটি গেয়ে ঢাকার মানুষকে অভিভূত করেছিলেন।
আশির দশকে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঢাকায় এসে বলেছিলেন, এই ঐতিহাসিক নগরী আমার মনে দাগ কেটেছে। ট্রেনে করে ঢাকা থেকে রানী গিয়েছিলেন গাজীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে। সেখানে তিনি ঢেঁকিতে ধান ভানা, মুড়ি ভাজা ও মুরগি পালনসহ মানুষের জীবনধারা উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা ঢাকায় এসে শান্তির বাণী শুনিয়ে গেছেন। চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা নগরী আমাদের গর্বের প্রিয় নগরী।
চাঁদ জয় করে পৃথিবীতে ফিরে এসে তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। ভ্রমণের অংশ হিসেবে তাঁরা ঢাকায়ও এসেছিলেন। ঊনষাট সালের সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে ঢাকার কৌতূহলী মানুষকে নীল আর্মস্ট্রং ও তার সঙ্গীরা চন্দ্র বিজয়ের গল্প শুনিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, ‘তোমাদের ছিমছাম নিরিবিলি ঢাকা শহরটি অপূর্ব।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েকবারই এসেছেন ঢাকায়। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় এলে বুড়িগঙ্গা নদীর বাকল্যান্ড বাঁধ সংলগ্ন করোনেশন পার্কে কবিকে দেয়া হয় জমকালো সংবর্ধনা। ‘তুরাগ’ নামে ঢাকার নবাবের বজরাটি কবির বিশ্রামের জন্য সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের আতিথেয়তায় অভিভূত হয়েছিলেন কবি। এরপর ঢাকার বলধা গার্ডেন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ফুল আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে কাটিয়েছিলেন। ধারণা করা হয় ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি বলধা গার্ডেনে বসেই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
কিংবদন্তির মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ঢাকায় এসেছিলেন সত্তরের দশকে। মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে দেখতে ঢাকা স্টেডিয়াম উপচে পড়েছিল মানুষ। সেদিন তিনি ঢাকার মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য মুষ্টিযুদ্ধের একটি প্রদর্শনী ম্যাচও খেলেছিলেন। মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে তার হাতে ঢাকার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। আর মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, ‘ঢাকায় এসে আমি মুগ্ধ, এটা আমার প্রিয় শহর।’
জাতিসংঘের দুজন মহাসচিব ডক্টর কুর্ট ওয়াল্ডহেইম ও জেভিয়ার পেরেজ দ্য কুয়েলার ঢাকা সফর করেছেন। তৃতীয়বার জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে এসেছেন কফি আনান। ঢাকায় এসেছেন মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এসেছেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালাম, মাদার তেরেসা, অমর্ত্য সেন, গ্যুন্টার গ্রাস। এসেছেন হলিউডের নায়িকা অড্রে হেপবার্ন, গানের অতিথি কুন্দন লাল সায়গল, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, রবি শঙ্কর, কানন বালা, মেহেদী হাসান, নূরজাহান, গোলাম আলী এমনি আরও অনেকে।
You must be logged in to post a comment Login