‘পুরাই অস্থির’ তরুণদের ভাষা

প্রকাশ: May 20, 2015
2013-02-05-17-18-09-51113ed10f4ad-untitled-19

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আড্ডায় কি ফেসবুক চ্যাটিংয়ে—নতুন ঘরানার নতুন কিছু শব্দ তরুণদের মুখে মুখে ফিরছে। ভাষাবিদেরা বলেন, ‘ভাষা সদা পরিবর্তনশীল।’ ভাষা পরিবর্তনে তরুণেরাই যে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তা খুবই স্পষ্ট। তরুণদের এই ভাষা নিয়ে অবশ্য ঘোর আপত্তি আছে রক্ষণশীল অনেকেরই। তবে তরুণেরা কি আপত্তি মানছেন? তরুণরা মনে করে, এই শব্দগুলো তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক। তারা প্রতিদিনের কথায় এই শব্দগুলো ব্যবহার করে। বয়সে যাঁরা বড়, তাঁদের কাছে তো খানিকটা বেখাপ্পা লাগবেই এসব শব্দ। কারণ, তাঁরা এতে অভ্যস্ত নন। যাঁরা বয়সে বড়, তাঁরা যখন তরুণ ছিলেন তখন কিন্তু তাঁরাও এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন।

এটা তো তরুণদের ভাবনা। বয়সে যাঁরা বড়, তারা ভাবছেন, ভাষার একটা নিজস্ব গতি আছে। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘তরুণদের এই শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে। যেমন, এখনকার তরুণেরা বলে, “ফোন দিয়ো।” ফোন কোরো না বলে তারা বলছে ফোন দিয়ো। এমনটা শুনলে মনে হয় কানে আঘাত লাগছে। তবে এটা ঠিক, ভাষা একটা স্রোতের মতো। এই স্রোতের সঙ্গে অনেক ময়লা-আবর্জনা, শ্যাওলা ভেসে আসে। যেসব শব্দ টিকে যাওয়ার তা টিকে যাবে। আর যেগুলো ভেসে যাওয়ার মতো, সেগুলো একটা সময় ভেসে যাবে। তাই আমি মনে করি, এতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। সমালোচনা অনেক হবে, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাষাকে নিজের গতিতেই চলতে দিতে হবে।’

তরুণেরা এখন কথায় কথায় বলে, ‘কুল!’ অভিধান ঘাটলে দেখা যায় এই শব্দের অর্থ ঠান্ডা! তার মানে কি আইসক্রিম খাওয়ার সময় তাঁরা এই শব্দ ব্যবহার করেন? না, গরম গরম জিলিপি মুখে পুড়েও তারা ভালোলাগার প্রকাশ করেন কুল বলে। কোনো একটা বিষয়ে দ্বিতীয়বার নিশ্চিত হওয়ার জন্য ‘তাই’? বললে উত্তরে শোনা যায়, ‘আবার জিগায়!’ কিংবা অদ্ভুত কিছু দেখে মনের অজান্তেই উচ্চারণ করেন ‘জিনিস’, ‘আজিব’, ‘পুরাই অস্থির’, ‘রকস’, ‘অসাম’ শব্দগুলো। আবার মতের মিল না হলে বলে ওঠেন, ‘খেলুম না।’ পাত্তা না দিতে চাইলে মনের ভাব প্রকাশ করেন ‘বেইল নাই’, ‘গুনলাম না’ কিংবা ‘অফ যা’ শব্দগুলো দিয়ে। খেলার মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষ শিবিরের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, ‘ধরে দেবানি।’ এই শব্দ তরুণদের অভিধানে যোগ হয়েছে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার কল্যাণে। বাকিগুলোর উৎপত্তি কোথায়? নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তরুণদের আড্ডাতেই যে এই শব্দগুলোর অঙ্কুরোদগ্ম—তা নিশ্চিত; তাই বলা চলে ‘আবার জিগায়’! এখন লেখাটা পড়ে আপনি কী বলবেন, ‘এইডা কিছু হইল’ নাকি ‘পুরাই অস্থির’? সিদ্ধান্ত আপনার, ‘ঠিকাসসসসে ভায়াআআ?’
তরুণেরা যেসব শব্দ ব্যবহার করছেন সেগুলোর আভিধানিক ও প্রায়োগিক অর্থ—

তরুণদের শব্দ

আভিধানিক অর্থ

প্রায়োগিক অর্থ

অফ যান

অভিধানে নেই

চুপ করুন

অসাম

চমৎকার

আজিব আজব

অসাম

চমৎকার

চমৎকার

আজিব

আজব

আজব

আবার জিগায়

পুনরায় জিজ্ঞেস করে

নিঃসন্দেহে

উরাধুরা

অন্য রকম

অদ্ভুত/অগোছালো/দারুণ

এইডা কিছু হইল

এটা কিছু হলো

চমকিত

কঠিন

অনমনীয়

খুব বেশি ভালো

কী দরকার ছিল

কোনো দরকার ছিল কি?

বিনয় অর্থে

কুল

ঠান্ডা

দারুণ

ক্র্যাশ খাওয়া

ভয়ানক পতন

হুট করে ভালো লাগা

খুব মজা হইছে

দারুণ মজা হয়েছে

ব্যাঙ্গার্থে

খেলুম না

খেলব না

মতের অমিল

গুনলাম না

হিসাব করলাম না

পাত্তা দিলাম না/বিবেচনা করলাম না

চরম

চূড়ান্ত

দুর্দান্ত

জটিল

যৌগিক/দুর্বোধ্য

দারুণ

জিনিস

বস্তু

একটু ভিন্ন চরিত্রের কিছু

জোস

জোশ দারুণ

জোশ দারুণ

ঠিকাসসসে ভায়াআআ…

ঠিক আছে ভাইয়া…

সমর্থনপ্রাপ্তির আশায় ব্যবহূত

তার ছিঁড়া

ছিঁড়ে যাওয়া তার

মাথায় গন্ডগোল আছে

দূরে গিয়া মর

দূরে গিয়ে মৃত্যুবরণ করুন

মতের অমিল

বেইল নাই

অভিধানে নেই

অবস্থানের অবনতি/পাত্তা দিলাম না

ফাটাফাটি

ফাটাফাটি

দারুণ

পুরাই টাশকি

পুরোপুরি আশ্চর্যান্বিত

চমকিত

পুরাই অস্থির

পুরোপুরি অস্থির

সত্যিই দারুণ

মাম্মা

মামা

বন্ধুদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে

ভালো ছিল

ভালো ছিল

সমর্থন

পাঙ্খা

ডানা

পুরোপুরি অন্যরকম

ধরে দেবানি

মারব (আঞ্চলিক শব্দ)

হুমকি দেওয়া

দৌড়ের ওপর আছি

দৌড়াচ্ছি

ব্যস্ত আছি

রকস

রকিংয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ

অসাধারণ

লাইকস

লাইক

পছন্দ করলাম

লুল/লুলজ

লাফ আউট লাউড

হাস্যকর

সেইরকম

তেমনটা

অসাধারণ/দারুণ

হেই ডুড

এই যে বন্ধু

এই যে বন্ধু

হোয়াটস আপ?

কী অবস্থা?

কী অবস্থা?

হ্যাং আউট

ঘোরাঘুরি

ঘোরাঘুরি

*উৎস: প্রথম আলো

You must be logged in to post a comment Login

মন্তব্য করুন